আর্কাইভ থেকে: আলেহান্দ্রো ও ভারতীয় ফুটবল
১০ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আলেহান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা আদর করে ডাকেন আলে স্যার বলে। আর রাইভাল ক্লাব হওয়ার দরুন আমরাও মক করি ওনাকে আলে ষাঁড় বলে।
কিন্তু নিরপেক্ষ দিক থেকে দেখতে গেলে স্পেনের এই ভদ্রলোকের মাপের কোচ ভারতীয় ফুটবলে খুব কম এসেছেন। একটা দলকে একটা কর্পোরেট সংস্থা পেশাদারিত্ব'র সাথে পরিচালনা করলে কী হতে পারে তা কোয়েস দেখিয়ে দিয়েছিল গতবছর। ভারতীয় ফুটবলে সদ্য বিশ্বকাপ খেলা কোনো ফুটবলার আসতে পারেন, এটা যখন সবার ধারনার বাইরে ছিলো তখন কোয়েসের হাত ধরে এসেছিলেন জনি অ্যাকোস্টা।
আর কোচ হিসেবে এতো বড়ো মাপের কেউ ভারতীয় ফুটবলে আসবেন সেটা কেউ কক্ষনোও কল্পনা'ও করেনি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের ইউথ সিস্টেমে কাজ করার পর রিয়াল মাদ্রিদ বি ( Castilla) দলের হেড কোচ হয়ে কাজ করা এই ভদ্রলোককে ভারতীয় ফুটবলে এনে চমক দেন কোয়েস কর্তারা। ভদ্রলোক ভারতীয় ফুটবলে কতটা মানিয়ে নেবেন তা নিয়ে যখন সন্দেহ ছিলো, তখন সেই দলের'ই ফিটনেসে অসম্ভব উন্নতি ঘটিয়ে মানের দিক থেকে একটা মিডিওকার দলকে এই আলেহান্দ্রো শেষ ল্যাপ অবধি রেখেছিলেন আই লীগ জেতার দৌড়ে। মাত্র এক পয়েন্ট'এর জন্য হাতছাড়া হয় আই লীগ কিন্তু তার হাত ধরে উঠে আসেন জবি জাস্টিন, লালডানমাওয়াইয়া রালতে, চুলোভা, সামাদ আলি মল্লিকের মতো ফুটবলারেরা। এবছরেও তিনি হাতে ধরে তৈরী করে নিচ্ছেন বাচ্ছা ছেলে বিদ্যাসাগর সিং'কে।
ভারতীয় ফুটবলের তো এরকম লোকদেরই দরকার, যারা তুলে আনবেন নতুন প্রতিভা'দের, তাদের পরিচর্যা করবেন, কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফুটতে সাহায্য করবেন।
তাই প্রতিপক্ষ হলেও ভালো লাগে আলেহান্দ্রো'কে, আর আলেহান্দ্রো ইস্টবেঙ্গলে সাফল্য পেয়েছেন, বা আকবর নওয়াজ স্প্যানিশ সেট আপ নিয়ে চেন্নাই কে জিতিয়েছেন বলেই আমাদের কর্তারাও কিবু ভিকুনা'র হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন। যার ফল হিসেবে ইতিমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের ইউথ সেট আপ থেকে উঠে আসা শেখ সাহিল'কে। শুভ ঘোষের খেলাতেও পরিনতি বোধের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। এতদিন ধরে যে নাওরেম শুধু ট্যালেন্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনিও মোহনবাগানে নিজের অসাধারন প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছেন।
আচ্ছা, শেষ কবে কলকাতা ডার্বিতে এতো সুন্দর ট্যাকটিকাল লড়াই দেখেছি, মনে করতে পারেন? আলেহান্দ্রো বনাম কিবু ভিকুনার লড়াইয়ে কিবু বাজিমাত করেছেন তার ট্যাকটিক্স দিয়ে, কিন্তু আলেহান্দ্রো'ও খুব পিছিয়ে তো ছিলেন না। এরকম ট্যাকটিক্যাল মাস্টারক্লাস দেখতে সবারই ভালো লাগে, আর আলে বা কিবুর সৌজন্যে আমরা তা আগামীতেও হয়তো দেখতে পাবো ।
যাইহোক, গতকাল পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে ১-০ হারার পর ইস্টবেঙ্গল মেম্বার্স গ্যালারি থেকে নাকি থান ইঁট ছোঁড়া হয় আলেহান্দ্রো'র দিকে( আলেহান্দ্রো'র কিছু হয়নি)। ঠিক যেভাবে মর্গ্যান কে থুথু ছেটানো বা আমাদের কিছু মহান সমর্থকেরা সঞ্জয় সেনের শেষ ম্যাচে তাকে থুথু ছেটান।
এভাবেই কলকাতা ময়দানে সমর্থকেরা স্যার দের গুরুদক্ষিণা দিয়ে আসছেন 😊
দয়া করে এগুলো বন্ধ করুন; ভারতীয় ফুটবলে আলেহান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া বা কিবু ভিকুনা'দের এখনোও আগামী ১০টা বছর দরকার।
সুনীল ছেত্রীর জায়গাটা ভবিষ্যতে শুভ ঘোষ বা বিদ্যাসাগর সিং নিতেই পারে। মাঝমাঠে সাহাল, অমরজিতের সঙ্গে একটা শেখ সাহিল নীল জার্সিতে শাসন করতেই পারে। কোনো লালরামচুলোভা'ই হয়তো ২বছর পর রাইট ব্যাকে খেলবে।
এভাবে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য এদের দরকার, ২০২৬'এ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নপূরণের জন্য এদের দরকার।
তাই থুথু বা ইঁট ছুড়বেন না, মুখে পাশে আছি না বলে খারাপ দিন গুলোতে সত্যিকারের পাশে দাঁড়ান।
কলকাতা ময়দান দীর্ঘজীবী হবে।
গ্যালারিতে দু'দলের টীফোর লড়াইয়ের সাথে সাথেই মাঠের ভিতরে ট্যাকটিক্যাল লড়াইটাও দীর্ঘজীবী হবে।
আরো ১০টা বছর থেকে যান আলেহান্দ্রো, কিবু ভিকুনার পাশের ডাগআউট টায় আপনাকেই মানায় 🙂
Comments
Post a Comment